1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব আর উন্নয়নের সেরা প্রাপ্তি: নাইম ইসলাম নিবির 

  • Update Time : বুধবার, ২২ জুন, ২০২২
  • ৩৯৬ Time View

পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব আর উন্নয়নের সেরা প্রাপ্তি।

– নাইম ইসলাম নিবির 

আগামী ২৫ শে জুন বাঙালি জাতির স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হবে। খুলে দেয়া হবে সমগ্র দেশবাসীর যাতায়াতের জন্য। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টা আর সাহসী উদ্যোগে বিভিন্ন অপশক্তি, দেশি-বিদেশি শত্রু আর বিরোধিতা কারীদের নানাবিধ ষড়যন্ত্র শক্তভাবে মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববাসীর বিষ্ময় আর বাঙালি জাতির আবেগের পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র একটি সেতু কিংবা স্টিলের কোনো কাঠামো নয়, আমাদের ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে আবেগের একটি নাম এই পদ্মা সেতু। অহংকার ও সাহসের আরেক নাম হলো পদ্মা সেতু। এই সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার মূর্ত প্রতীক। এই সেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দক্ষতা আর মেধার তীক্ষ্ণতার প্রতিক। এই সেতু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের অগ্রসরতার প্রতিক। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের এক উজ্জ্বলতম মাইলফলক। আজকের দিনে আমি যখন এই উপসম্পাদকীয়টি লিখছি তখন সমগ্র বিশ্ব বিপুল আগ্রহ আর উদ্দীপনা নিয়ে দুই চোখ ভরে আমাদের আত্মশক্তি আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বের প্রতীক এই পদ্মা সেতুটি দেখছে।

সমগ্র বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা না দিলে বহু আগেই ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু চালু হয়ে যেত। সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের পর থেকেই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আর দুর্নামকে মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন আমাদের আশা ভরসার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু বাঙালি জাতির মুক্তি আর উন্নয়নের অগ্রদূত জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি নির্মাণের শুরুতে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন, কারিগরি ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পটি আমাদের ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির এক অনন্য পথ দেখাবে। কমে আসবে বেকারত্বের হার। ঘুচে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের বেকারত্ব নামক অভিশাপ। মা বোনেরা হয়ে উঠবে স্বনির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সকল শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণে সেদিন পাকিস্তানের হাত থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ঠিক তেমনিভাবে পদ্মা সেতু নিয়ে যখন বিভিন্ন জন বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তখন ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের তোয়াক্কা না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস প্রচেষ্টা আর দেশের জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের অর্থে এমন একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প সম্পন্ন করতে আমরা সক্ষম ও সমর্থ হই।

প্রতিকূলতা জয় করে সফল হওয়ার সংস্কৃতি আর সাহস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে শিখিয়ে গিয়েছেন। ১৯৫২ সালে চীনের সংগ্রামী মানুষের সাহসী কর্মযজ্ঞ দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের ২৩৪ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছিলেন, ‘যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবদ্ধ ছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে-তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা।’ বঙ্গবন্ধু সেসময়ই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলেন, কী ভাবে নিজের দেশের মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করবেন। সারাটা জীবন সেই লক্ষ্যে স্থির থেকেই তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন স্বদেশের স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য।

বঙ্গবন্ধু শূন্যহাতেই অজেয় মানুষের প্রাণশক্তিকে পুঁজি করে স্বদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী মননের স্বাভাবিক বিস্তার আমরা তার কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যেও প্রত্যক্ষ করতে পাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের লক্ষ্যে। তারই দেখানো পথে দুর্বার গতিতে স্বদেশ গড়ার এক অসামান্য লড়াইয়ে নেমেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা যিনি আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার একামাত্র বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথী। বিশ্বরাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রতীক, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর জাতি-দেশ-জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র, বিশ্বনন্দিত নেতা। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ‘নীলকণ্ঠ পাখি’, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি। আত্মশক্তি-সমৃদ্ধ সত্য-সাধক। প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির কারিগর। সমুদ্র সমান অর্জনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বনেতা।  সুতরাং আমার সাথে সম্মানিত পাঠকগণও বলতে বাধ্য হবেন যে পদ্মা সেতু সাহসী নেতৃত্বের এক কালজয়ী পরম্পরার ফসল।

বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা ও আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনই দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। তাই বাবার মতো বঙ্গবন্ধুকন্যাও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর প্রয়োজন বোঝেন। তাইতো ২০০১ সালের ৪ জুলাই নিজ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে মাওয়া ফেরিঘাটের কাছেই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু সেতুটির নির্মাণকাজ থমকে যায় বিএনপি সহ বেশকিছু রাজনৈতিক সংগঠনের হীনম্মন্যতার কারণে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আবারও বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ সংগ্রাম আর কর্মসূচি হাতে নেন। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি পদ্মা সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হলেও পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক যুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণেও এসকল ব্যাংক সহায়তা করেছিলো। যার প্রেক্ষিতে সরলবিশ্বাসে পদ্মা সেতু নির্মাণে অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাংককে যুক্ত করেছিল বাংলাদেশ সরকার। প্রস্তাবিত ১.২ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পের অর্থায়নে শেষ পর্যন্ত সেই বিশ্বাসের দাম রাখেনি এ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি। কিছু আওয়ামী লীগের বিরোধী চক্র ষড়যন্ত্র করে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে  অযথা মিথ্যা দূর্ণীতির অভিযোগ এনে একটি নোংরা বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। পরিশেষে অবশ্য তাদের আনিত দূর্ণীতির অভিযোগ কানাডার আদালতসহ সকল স্থানেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের মিথ্যা অভিযোগে কর্ণপাত করা বিশ্বব্যাংকের বাড়াবাড়ির সমালোচনা করেছিলেন ততকালীন সময়ের জাপানের রাষ্ট্রদূত। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র আর বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার অসহযোগিতা উপেক্ষা করে দ্রুততার সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নিজেদের অর্থেই এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দেবেন তিনি, যে কারও সহায়তা ছাড়া আমরাও পারি নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই করতে।

পদ্মা সেতু নিয়ে যে টানাপোড়ন তৈরি হয়েছিল, এর সফল সমাপ্তি ঘটে কানাডীয় আদালতে দেওয়া রায়ে। ওই রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো সুযোগ ছিল না। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের অর্থায়ন বাংলাদেশ নিজেদের সম্পদ থেকেই সম্পন্ন করতে পারে-সেটিই হলো আমাদের পদ্মা সেতু বিতর্কের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পদ্মা সেতু নির্মাণে  প্রবাসী বাঙালিদের অবদানও রয়েছে অতুলনীয়। প্রবাসীরা পদ্মা সেতুর জন্য সরাসরি সহায়তা দিতে চেয়েছিলো। প্রবাসী কর্মীদের দেশের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা সবসময়ই অসাধারণ বিষয়। তাই তাদেরকে আমার এই উপসম্পাদকীয়র মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষ হতে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। একইসাথে আমি আশাবাদী আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা নিশ্চয়ই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখে উদ্বেলিত ও গর্বিত ও সম্মানিত হবেন।

প্রিয় পাঠক আমি আশা করবো যুগ যুগ ধরে আপনাদের কাছে ইতিহাসের এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মুহূর্তটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে কারিগরি চ্যালেঞ্জও একটি বিশেষ  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাজনের পর সবচেয়ে খরস্রোতা নদী হলো আমাদের এই পদ্মা নদী। পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে স্রোতের বেগ সবচেয়ে বেশি। আর এ ধরনের নদীতে পিলার বসানো একদিকে যেমন কঠিন অন্যদিকে চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম ১২৮ মিটার পিলার স্থাপন করতে হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। নির্মান কাজের মাঝে ২০২০ সালে বর্ষাও ছিল প্রবল আকারের। নির্মাণ কাজ চলাকালীন বন্যাও হয়েছিল কয়েকবার। তাই সে বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্প্যান বসানোর কাজ সম্পূর্ণ  বন্ধ রাখতে হয়েছিল। সেতুর পিলার বসাতে বিদেশ থেকে বিরাট সব যন্ত্রপাতি আনতে হয়েছিল। এমনকি কারিগরি নকশা পর্যন্ত বদলাতে হয়েছিল। দেশি-বিদেশি পরামর্শকদের সমন্বয়ও করতে হয়েছিল। তাছাড়া করোনার কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকদের কাজও বন্ধ ছিল কয়েক মাস। এসব কারণে এ সেতু নির্মাণে বেশ খানিকটা বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি ছিল স্বাভাবিক। এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন করতে হয়েছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ।

অন্যদিকে নানান প্রতিকূলতার কারণে সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটির খরচও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আর এ বিষয়টি পুজি করে অনেক ব্যক্তিরা পদ্মা সেতুতে বাড়তি খরচ করে দূর্নীতি করা হয়েছে বলে আবারও জনগনকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

প্রিয় পাঠক, পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে আপনাদের মতো আমারও আবেগ ও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। কারণ এটি শুধুই একটি সেতু নয়। এটি শুধুই যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়। এই পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্ন। এই সেতুটি আমাদের স্বাধীন দেশের স্বনির্ভরতার চিহ্ন। এ সেতু নির্মাণ ব্যয় সময় ইত্যাদি নিয়ে অনেক ব্যাক্তির সমালোচনা আছে। অবশেষে সেতুর বাস্তবায়ন তথা সেতু স্থাপন করার মধ্য দিয়ে সব জল্পনা-কল্পনা আর গুজব ম্লান হয়ে গিয়েছে। পদ্মা সেতুর বিশেষত্ব গুলোর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়ন ও কর্মসম্পাদন যে এককভাবে সম্পন্ন করা যায়, তা এতদিন ছিল আমাদের ভাবনার বাইরে। তবে এটি আর ভাবনা বাইরের বস্তু নয় এটি আজ বর্তমান ও বাস্তবিক। পদ্মা সেতু আমাদের বাঙালিদের সেতু। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এর মালিক। সেতুটির অর্থায়ন করেছে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। সুতরাং এ সেতু বাস্তবায়নে সক্ষমতা এবং স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জের মধ্যকার যে মজবুত সেতুবন্ধ রচিত হয়েছে তার গৌরব ও মালিকানা নিতান্তই এ দেশের মানুষের ও বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার।

শেখ হাসিনা এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য বিশ্বব্যাংকের মতো প্রকাণ্ড প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করে, তাদের সব দাবি অগ্রাহ্য ও পরাজিত করে বাংলাদেশের মান সমুন্নত ও উচ্চাসীন করার অনন্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ২৫ শে জুন বাংলাদেশের মানুষ সেতুর সুফল পেতে শুরু করবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী পদ্মার ওপর নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক ও রেল সেতু দেশের প্রধানতম এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সেতু। এ সেতু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক বিস্ময়। আশা করা যাচ্ছে পূর্ণোদ্যমে কার্যক্রম শুরু হলে সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। সেতুটির মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চল প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত হবে এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ স্থাপিত হবে। অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সোনালি ভবিষ্যতকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করে সার্বিক উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে।

প্রিয় পাঠক এবার আপনাদেরকে পদ্মা সেতু সম্পর্কে কিছু মৌলিক ধারণা প্রদান করবো। আমার মতো আপনারাও জানেন যে, বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ এ সেতুর পুরো নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। সেতুটি নির্মাণের জন্য ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এই প্রকাণ্ড সেতুর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং ইংরেজি S আকৃতির সেতুর নকশা প্রণয়ন করেছে আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম AECOM। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার (২০,২০০০ ফুট) এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার (৫৯.৪ ফুট)। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর এবং কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় এটি আরো কয়েক মাস বিলম্বিত হতে পারে, অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে অবগত করেছিলেন। সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্ব পালন করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

নির্মাণশৈলী ছাড়াও এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সেতু। কারণ এর প্রধান নির্মাণ উপকরণ হচ্ছে কংক্রিট ও স্টিল। পদ্মা সেতুর ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতার সক্ষমতা রয়েছে। সেতুটিতে ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার এবং ৮১ টি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মোট স্প্যান সংখ্যা ৪১ টি। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রতিটি স্পেনের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। এ সেতুর স্থানাঙ্ক ২৩.৪৪৬০ ডিগ্রি (উত্তর) এবং ৯০.২৬২৩ ডিগ্রি (পূর্ব)। পানির স্তর থেকে এই অত্যাধুনিক সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট এবং এর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট। সেতুটির নির্মাণকাজে প্রায় চার হাজার জনবল নিয়োজিত। সেতুটিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, অপটিক্যাল লাইনসহ সব ধরনের পরিবহন সুবিধা থাকবে। দ্বিতলবিশিষ্ট সেতুর উপরের তলায় চার লেনের সড়ক থাকবে এবং নিচতলায় রেললাইন থাকবে। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক হচ্ছে জাজিরা ও মাওয়া এবং সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। দুই পাড়ে নদী শাসন ১২ কিলোমিটার। এ সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯টি জেলার সঙ্গে সংযোগ ত্বরান্বিত হবে। অর্থাৎ, সারা বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ আরো বেশি সহজ ও সুগম হবে। সেতুর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর মতো এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ। তার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্যে পরিণত হয়েছে। এ সফলতা সহজে বাস্তবায়ন হয়নি। আর্থিক সংকট, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিশ্বাস, মনোবল ইত্যাদি ছাড়াও নানা ধরনের বিষয় সামাল দিতে হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা রাখে। একই সঙ্গে এটি শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল, সাহসিকতা ও সক্ষমতার পরিচায়ক। নিজেদের শক্তি, সক্ষমতা ও ভূগোল নিজেদের মতো করে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বহুমুখী এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশকে বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং এর মধ্য দিয়ে দেশের মধ্যকার এতদিনকার অভ্যন্তরীণ দূরত্ব লাঘব হবে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তথা সব খাতে প্রভূত গতিসঞ্চার হবে। দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদীর ওপর নিজস্ব অর্থায়নে বিশালাকৃতির সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে এটি আজ বাংলাদেশের জাতীয় আকাঙ্ক্ষা, প্রতীক ও চেতনায় পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সফলতা কেবল এ সেতুর সচলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ বা নির্দিষ্ট নয়। পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্ধনের মাধ্যমে গোটা দেশের সঙ্গে সংযোগ ও যোগাযোগ স্থাপন করবে।

বাংলাদেশ যখন পরাধীন তখন বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তার অকুতোভয় নেতৃত্বে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে স্বপ্ন দেখেছিলেন শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার, সোনার বাংলা গড়ার। কিন্তু তাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে খুনিরা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ সহজসাধ্য না হলেও তা অসাধ্য নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণে দেশের মানুষও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতুর প্রভাবে বাংলাদেশের, বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এ অঞ্চলের একুশ জেলার অর্থনীতি ও সমাজে আসবে অকল্পনীয় পরিবর্তন। এ সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেল-দুই পথেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। দিনের পর দিন পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না। ঝড়বৃষ্টিতে ফেরি বন্ধ থাকার কারণে মানুষের যাতায়াত থমকে থাকবে না। সেতুটির কারণেই প্রথমবারের মতো পুরো দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোতে চলে আসতে সক্ষম হবে।

দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভোক্তার সমাবেশ যে রাজধানী ঢাকা, তার সঙ্গে অনায়াসে সংযুক্ত হতে পারবেন। অন্যদিকে তারা রাজধানী থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারবেন তাদের গ্রামের ও আশপাশের এসএমই উদ্যোগগুলোর জন্য। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু হবে শুনেই ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হতে শুরু করেছে। বরিশাল শহরের আশপাশের জমির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর দুই পারেই এক্সপ্রেসওয়ের পাশের জমির দাম তিন-চারগুণ বেড়ে গেছে। নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, আবাসন প্রকল্প, রিসোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, মানবসম্পদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট ও নানা ধরনের এসএমই উদ্যোগ স্থাপনের হিড়িক পড়ে গেছে। খুলনা ও বরিশালে জাহাজ নির্মাণশিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। কুয়াকাটায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে দ্রুতগতিতে। আগামী দিনে বিকাশের এ ধারা আরও বেগবান হবে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেলের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট অবকাঠামোও স্থাপিত হবে। এর ফলে কলকাতার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এর প্রভাব বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের পণ্যসেবার পরিমাণ বাড়বে। নতুন নতুন জাহাজ ভিড়বে। ইন্টারনেট সেবা সহজেই পেলে দক্ষিণাঞ্চলে ডিজিটাল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বাড়বে। আর গ্যাস ও বিদ্যুৎ সহজলভ্য হলে এ অঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্যের বিকাশও ঘটবে। কৃষিসহ দক্ষিণাঞ্চলের সামগ্রিক উৎপাদন, সেবা, পর্যটন, শিল্প-বাণিজ্যেও বিনিয়োগ বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। আর সেটা হলে এখন যে জলবায়ু চ্যালেঞ্জের শিকার অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে ঝুঁকিপূর্ণ অনানুষ্ঠানিক কাজকর্ম করতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের সংখ্যা কমে আসবে। দক্ষিণ বাংলায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। নতুন নতুন শহরও গড়ে উঠবে।

ঢাকার কাছে বলে পদ্মার ওপারে ছোট-বড় নানা শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। দক্ষিণ বাংলা হবে পর্যটনের এক উৎকৃষ্ট হাব। ছুটি পেলেই ঢাকা ও অন্যান্য নগরের বাসিন্দারা ছুটবেন দক্ষিণ বাংলার প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের সন্ধানে। তারা যাবেন কুয়াকাটা, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শনে, যাবেন পায়রা বন্দরে। পদ্মার চরগুলোয় গড়ে উঠবে নতুন নতুন রিসোর্ট ও পরিকল্পিত ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র। সরকারও এরই মধ্যে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে পদ্মাপারের পুরো এলাকাকে উন্নত করার লক্ষ্যে। শোনা যাচ্ছে, পদ্মার চরাঞ্চলে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাইটেক পার্ক, আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র, বিমানবন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ভাবছে সরকার। পদ্মা সেতুর কাছেই দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি গড়ে উঠছে। এখানে থাকবে আধুনিক আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব সুযোগ-সুবিধা। পদ্মা সেতুর আশপাশে গার্মেন্ট ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটবে। খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে শিপ-বিল্ডিং শিল্পের বিকাশ ঘটবে। মোংলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা ইপিজেড, পায়রাবন্দর, রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা গেলে এসব প্রকল্পে বিপুল কর্মসংস্থান ঘটবে। একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বছরে প্রায় বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ১.০৪ শতাংশের কর্মসংস্থান হবে। আরও সহজ করে বলা যায়, আগামী পাঁচ বছরে দশ লাখ অর্থাৎ বছরে দুই লাখ মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে। দশ বছর পর এ সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যাবে।

দক্ষিণ বাংলায় বাংলাদেশের সাতাশ শতাংশ মানুষের বসবাস। বিচ্ছিন্ন থাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার সারা দেশের গড় হার থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি। সেতুর কারণে যোগাযোগ ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হলে এ অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার ১.০১ শতাংশ হারে কমবে। এর প্রভাবে সারা দেশের ০.৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য হার কমে আসবে। বিসিক এর তথ্য মতে আগামী পাঁচ বছরে শুধু বরিশাল বিভাগেই পাঁচশ থেকে এক হাজার নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হবে। সেতুটি চালু হওয়ার পর দক্ষিণ বাংলায় শিল্পকারখানা স্থাপনে আরও বেশি করে উৎসাহী হবেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। তাদের যেন বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তি পেতে কোনো অসুবিধা না হয়, তা এখন থেকেই সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে। উদ্যোক্তাদের পদ্মার ওপারে যেতে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।

অদম্য লড়াকু মনের উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই বিশ্বাস করেন, জীবনযুদ্ধের মোকাবিলায় জনগণের প্রতিরোধক্ষমতা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞাই এবং আত্মনির্ভরশীলতাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তবেই আমাদের কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সেই সক্ষমতার প্রতীক। আমাদের পুঞ্জীভূত আত্মশক্তির সমাহারে তৈরি আত্মপ্রত্যয়ের এক অসাধারণ স্বপ্নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রিয় পাঠক, আমরা আলোচনার একেবারে প্রান্তসীমায় চলে এসেছি। পরিশেষে আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজকের মতো বিদায় নেবো।

সম্মানিত পাঠকগণ! একটু ভেবে দেখুন তো অন্যকোনো সরকারের পক্ষে কি পদ্মা সেতু নির্মাণ কিংবা বাস্তবায়ন সম্ভব হতো? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীন ভূখণ্ড দিলো, স্বাধীনতা দিলো, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাদেরকে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করে দিলো, নিরলস পরিশ্রমের দ্বারা উন্নয়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শতভাগ বিদ্যুৎ তারেক রহমান বলেছিলো সম্ভব না। শেখ হাসিনা বাস্তবায়িত করে দেখিয়ে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া বলেছিল পদ্মাসেতু আওয়ামী লীগের দ্বারা সম্ভব না। আওয়ামী লীগই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। তবুও বলছি আজকে আপনি সরকারের অনেক সমালোচনা করতে পারবেন। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার বাক স্বাধীনতা আছে। আপনার সন্তানের পড়ালেখার জন্য বছরের প্রথম দিন বই কিনে দেয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। কারণ সেটিও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন এই সেতু কাদের জন্য?  এই সেতু দিয়ে কারা যুগ যুগ ধরে যাতায়াত করবে? কাদের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করছেন?  কেনো করছেন? কাদের স্বার্থে করছেন? প্রশ্ন ব্যক্ত করে আজকের নিবন্ধের ইতি টেনে বিদায় নিলাম।

 

নাইম ইসলাম নিবির : প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য রাজনীতিক ও কলামিস্ট 

www.facebook.com/politician.nayeem.nibir

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..